শেয়ার বাজার কী এবং এটি কিভাবে কাজ করে?

Avatar

Published on:

শেয়ার বাজার কী এবং এটি কিভাবে কাজ করে?

বর্তমান যুগে আমরা সবাই চাকরির পাশাপাশি প্যাসিভ ইনকাম সোর্স খুঁজে থাকি। বর্তমান সময়ে শেয়ার মার্কেট প্যাসিভ ইনকামের একটি আলোচিত সোর্স। শেয়ার মার্কেট কে অনেকেও স্টক মার্কেটও বলে থাকেন। বাংলাদেশের প্রায় সকল কোম্পানিগুলোর শেয়ার মার্কেটের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ সাধারণ মানুষই জানেন না যে শেয়ার মার্কেট বা স্টক মার্কেট কী, শেয়ার মার্কেট কিভাবে কাজ করে, কেন শেয়ার মার্কেটগুলোর বাজারদর উঠানামা করে এবং শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার নিয়ম কি কি।

আপনি যদি শেয়ার বাজার সম্পর্কে জানতে চান এবং শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার কথা ভাবছেন, তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য অনেক সাহায্যকারী হবে। শেয়ার বাজার কী ও শেয়ার বাজার কিভাবে কাজ করে এবং শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার নিয়মকানুন সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

শেয়ার বাজার কী?

স্টক মার্কেট বা শেয়ার বাজার হল বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের স্থান। শেয়ার অর্থ হলো কোন কোম্পানির মূল মালিকানার একটি নির্দিষ্ট অংশ। শেয়ারবাজারে মূলত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আপনি কোন নির্দিষ্ট কোম্পানির একটি শেয়ার কিনে নিলেন, এখন আপনি কোম্পানির কাছ থেকে শেয়ারটি কেনার মাধ্যমে উক্ত কোম্পানীর একজন বিনিয়োগকারী হয়ে গেলেন। এখন আপনি আপনার ইচ্ছামতো যেকোনো সময় এই শেয়ারটি বিক্রয় করতে পারেন। আর এই শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় গুলো শেয়ার বাজারের কার্যক্রম যা স্টক এক্সচেঞ্জ নামেও পরিচিত।

এক কথায়, শেয়ারবাজার হলো এমন একটি স্থান যেখানে নিবন্ধিত বিভিন্ন পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার ক্রয় এবং বিক্রয় করা হয়। শেয়ার বাজার স্টক এক্সচেঞ্জ বা পুঁজিবাজার নামেও পরিচিত।

কোম্পানির কেন শেয়ার বিক্রয় করে?

আমরা সবাই জানি ব্যবসায় প্রথম ও প্রধান হাতিয়ার হল মূলধন বা পুঁজি। আমি আগেই বলেছি শেয়ার বাজার মানে হল পুঁজিবাজার। অর্থাৎ কোম্পানিগুলো তাদের প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাব মেটানোর জন্য পুঁজিবাজারের মাধ্যমে সাধারণ জনগণের কাছে শেয়ার বিক্রয় করে থাকে।

বাংলাদেশের শেয়ার বাজার সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে বাংলাদেশের শেয়ার বাজার ধরন সম্পর্কে জানতে হবে। বাংলাদেশে মূলত দুই ধরনের শেয়ার সিস্টেম রয়েছে:

  1. প্রাইমারি শেয়ার বাজার
  2. সেকেন্ডারি শেয়ার বাজার

প্রাইমারি শেয়ার বাজার কী?

প্রাইমারি শেয়ারের মাধ্যমে মূলত কোম্পানি শেয়ার বাজারে প্রবেশ করে। অর্থাৎ কোন পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি মূলধনের অভাব মেটানোর জন্য সরাসরি বাজারে যে শেয়ার বিক্রয় করে সেটাই মূলত প্রাইমারি শেয়ার বাজার। কোম্পানির শেয়ারের যে মূল্য নির্ধারণ করে তার সাথে প্রিমিয়াম মূল্য যোগ করা হয় এবং স্টক এক্সচেঞ্জে রেজিস্ট্রেশন করা হয়। তারপর অনুমতি পেলে তা জনগণের কাছে বিক্রয়-এর কাজ শুরু করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ধরুন একটি কোম্পানি বাজারে ২০০ টি শেয়ার বিক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ৫০ টাকা, এবং প্রিমিয়াম মূল্য ২০ টাকা। অর্থাৎ আপনি যদি উক্ত কোম্পানি থেকে একটি শেয়ার ক্রয় করতে চান তাহলে আপনাকে ৭০ টাকা দিয়ে একটি শেয়ার ক্রয় করতে হবে।

সেকেন্ডারি শেয়ার বাজার কী?

সেকেন্ডারি শেয়ার হল মূলত যে শেয়ার সরাসরি কোম্পানির কাছ থেকে ক্রয় না করে একজন শেয়ার হোল্ডারের কাছ থেকে ক্রয় করা। যেমন ধরুন আপনি সরাসরি কোম্পানির কাছ থেকে একটি শেয়ার ক্রয় করেছেন, এটি প্রাইমারি শেয়ার। যখন আপনি এই শেয়ার বিক্রয় করতে যাবেন তখন এটি হয়ে যাবে সেকেন্ডারি শেয়ার। অথবা ধরুন এক ব্যক্তি সরাসরি কোম্পানির কাছ থেকে একটি শেয়ার কিনেছিল এখন তিনি সেটি বিক্রয় করতে চান এবং আপনি সেই সেটি কিনবেন। তখন সেটি সেকেন্ডারি শেয়ার হিসেবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ সরাসরি কোম্পানির কাছ থেকে ক্রয় করার পর একজন শেয়ারহোল্ডার যখন সেই শেয়ারটি অন্য কোন ব্যক্তির কাছে বিক্রয় করে তখনই সেটা সেকেন্ডারি শেয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়।

শেয়ার বাজার কিভাবে কাজ করে?

পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির মূলধনের অভাব মিটানোর জন্য শেয়ার বাজারে শেয়ার বিক্রয় করে থাকেন। শেয়ারবাজারকে পুঁজিবাজারও বলা হয়ে থাকে। তাই কোম্পানিগুলো পুঁজি বৃদ্ধি করার জন্য জনগণের কাছে শেয়ার বিক্রয় করে থাকে। তবে কোন কোম্পানি বাজারে শেয়ার বিক্রয় করার পূর্বে প্রথমে স্টক এক্সচেঞ্জ কোম্পানিগুলোর কাছে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। স্টক এক্সচেঞ্জে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার পর অনুমতি পেলে কোম্পানিগুলো বাজারে শেয়ার বিক্রয়ের কাজ শুরু করে। যারা এই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে চান অর্থাৎ শেয়ার ব্যবসা করতে চান তারা এই স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করেন। পরবর্তীতে শেয়ার বিক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিলেও স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে শেয়ার বিক্রয় করেন।

বাংলাদেশের দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ কোম্পানি রয়েছে:

  1. ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ
  2. চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ

শেয়ার ব্যবসা করার নিয়ম

আমরা সবাই জানি ব্যবসায়ের পূর্বশর্ত হল ঝুঁকি গ্রহণ করা। ব্যবসায়ে লাভ-ক্ষতি থাকবেই। আর এই ক্ষতির ঝুঁকি নিয়েই কাজ করা হল ব্যবসা। তবে শেয়ার ব্যবসা করার নিয়ম জেনে আপনি আপনার বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে শেয়ার ব্যবসা করে অনেক লাভবান হতে পারেন। তো চলুন জেনে নেই শেয়ার ব্যবসা করার আগে যে বিষয়গুলো জানা জরুরি।

শেয়ার মার্কেট থেকে কখন শেয়ার কিনবেন?

শেয়ার মার্কেট থেকে শেয়ার কেনার আগে, আপনি যে কোম্পানির শেয়ার কিনবেন সেই কোম্পানি সম্পর্কে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে নিবেন। কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে গেলে এবং কোম্পানির ভবিষ্যতে শেয়ারের দাম বাড়ার সম্ভাবনা থাকলে শেয়ার কেনা উচিত। শেয়ারবাজার থেকে শেয়ার কেনার আগে অবশ্যই শেয়ার বাজার সম্পর্কে গবেষণা করে নেওয়া উচিত। অর্থাৎ আপনি যে কোম্পানির শেয়ার কিনতে যাচ্ছেন, সেই কোম্পানি সম্পর্কে বিগত কয়েক বছরের শেয়ার বাজার সম্পর্কে গবেষণা করে নিবেন।

শেয়ারবাজার থেকে শেয়ার কিভাবে কিনবেন?

শেয়ারবাজার থেকে শেয়ার ক্রয় করার জন্য আপনাকে অবশ্যই একজন বিনিয়োগকারী হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এবং শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার জন্য আপনার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা প্রয়োজন। আপনি দুইভাবে শেয়ারবাজার থেকে শেয়ার ক্রয় করতে পারবেন:

  1. ব্রোকারের মাধ্যমে
  2. ব্যাংকের মাধ্যমে

শেয়ার ক্রয় করার জন্য যারা শেয়ারবাজারে মিডিয়া হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ ব্রোকার-এর কাছ থেকে শেয়ার ক্রয় করতে পারবেন। অথবা সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমেও আপনি শেয়ারবাজার থেকে শেয়ার ক্রয় করতে পারেন।

শেয়ার ব্যবসা করতে কত টাকা লাগে?

শেয়ার ব্যবসা করতে কত টাকা লাগে তা নির্ভর করে মূলত আপনি কোন কোম্পানির শেয়ার কিনছেন সেই কোম্পানির শেয়ারের মূল্য কত টাকা এবং আপনি কতটি শেয়ার কিনতে চান। তবে আপনাকে একটা ধারণা দেওয়ার জন্য বলতে পারি, প্রাইমারি শেয়ার বাজারে ৫০০০ টাকা এবং সেকেন্ডারি শেয়ার বাজারে ২০ হাজার টাকা দিয়ে আপনি শেয়ার ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

শেয়ার ব্যবসা হালাল নাকি হারাম?

আমাদের ধর্মে ব্যবসাকে হালাল করা হয়েছে। তবে এই ব্যবসাটি হালাল না হারাম তা নির্ভর করে আপনি কিসের ব্যবসা করেন। আপনার প্রোডাক্টটা মূলত কি এবং আপনার মূলধনের উৎস হালাল নাকি হারাম। আপনি শেয়ার ব্যবসা করার ক্ষেত্রে যে কোম্পানির শেয়ার কিনবেন, আপনি মূলত সেই কোম্পানিতে আপনার অর্থ বিনিয়োগ করছেন অর্থাৎ আপনিও সেই কোম্পানির একজন বিনিয়োগকারীও অংশীদার। অর্থাৎ আপনি উক্ত কোম্পানীতে বিনিয়োগ করে উক্ত কোম্পানির মালিকানার একটি নির্দিষ্ট অংশ কিনেছেন।

Related Posts

সঙ্গে থাকুন ➥