কিন্তু ভবিষ্যতে এই চিত্র দ্রুত বদলে যেতে পারে। অ্যাপল-মাইক্রোসফটের মতো এনভিডিয়ার নামও ছড়িয়ে পড়বে। এর প্রমাণ ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। ১৮ জুন, মঙ্গলবার, এনভিডিয়া বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানি হিসেবে শীর্ষে উঠেছে, অ্যাপল-মাইক্রোসফটকে পিছনে ফেলে।
কীভাবে শীর্ষে উঠলো এনভিডিয়া: এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি সূচকে অন্যতম সেরা পারফর্ম করা কোম্পানি এনভিডিয়া। পাঁচ বছর আগেও ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক কোম্পানিটির শেয়ারের দর ছিল মাত্র ৩.৭৯ মার্কিন ডলার। সেটি বেড়ে এখন ১৩৬ ডলারে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ, গত পাঁচ বছরে এনভিডিয়ার শেয়ারের দর বেড়েছে প্রায় ৩৫০০ শতাংশ। গত ১২ মাসে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে ২০৯ শতাংশ উত্থান দেখেছে, আর গত ছয় মাসে ১৮১ শতাংশ বেড়েছে। সে তুলনায়, এ বছর মাইক্রোসফট এবং অ্যাপলের শেয়ারের দর বেড়েছে যথাক্রমে ২০.৩ এবং ১৫.৪ শতাংশ। এই মাসের শুরুর দিকে বাজারমূল্যে অ্যাপলকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল এনভিডিয়া। মঙ্গলবার এর শেয়ারের দাম ৩.৫ শতাংশ বেড়ে ১৩৬ ডলারে পৌঁছায়। ফলে তারা মাইক্রোসফটের চেয়েও দামি কোম্পানি হয়ে ওঠে।
বর্তমানে এনভিডিয়ার বাজারমূল্য ৩৩৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলার, যা বছরের শুরুতে ছিল তার দ্বিগুণ। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী মাইক্রোসফটের বর্তমান বাজারমূল্য ৩৩২ হাজার কোটি ডলার এবং অ্যাপলের বাজারমূল্য ৩২৯ হাজার কোটি ডলার।
সংক্ষেপে এনভিডিয়া কোম্পানি: ১৯৯৩ সালে তাইওয়ানে জন্ম নেওয়া প্রযুক্তিবিদ জেনসেন হুয়াং প্রতিষ্ঠা করেন এনভিডিয়া, একটি কম্পিউটার চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে। পরবর্তীতে, ভারী গ্রাফিক্স-নির্ভর ভিডিও গেমগুলোর চিপ তৈরির জন্য পরিচিত হয়ে ওঠে এনভিডিয়া। সম্প্রতি, এআই ল্যাবরেটরি এবং এআই অ্যালগরিদম পরিচালনার জন্য একই চিপ ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে এনভিডিয়ার চিপের চাহিদা বেড়েছে এবং বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও বেড়েছে। বিশ্লেষকরা এআই-নির্ভর যন্ত্রের চিপকে ‘প্রযুক্তি খাতের নতুন সোনা বা তেল’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
শীর্ষধনীদের কাতারে এনভিডিয়ার হুয়াং: এনভিডিয়ার উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে জেনসেন হুয়াংয়ের সম্পদও দ্রুত বেড়েছে। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, এ বছরের শুরু থেকে এনভিডিয়া প্রধানের সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৭৫০০ কোটি ডলার। বর্তমানে ১১,৯০০ কোটি ডলারের সম্পদ নিয়ে তিনি বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় রয়েছেন ১২তম স্থানে।
শুধুই কি উত্থানের গল্প: বিশ্লেষকরা বলেছেন, প্রতিযোগিতামূলক এবং পরিবর্তিত বাজার পরিস্থিতি সত্ত্বেও এনভিডিয়ার ভালো পারফরম্যান্স অব্যাহত থাকবে। কোম্পানি জানিয়েছে, জুলাই মাসে শেষ হতে চলা প্রান্তিকে তারা ২৮০০ কোটি ডলার মুনাফার আশা করছে। গত এপ্রিলে শেষ হওয়া প্রান্তিকে তারা ২৬০০ কোটি ডলার মুনাফা অর্জন করেছিল, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১৮ শতাংশ এবং বার্ষিক হিসেবে ২৬২ শতাংশ বেশি। এই সময়ে তাদের নেট আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৬২৮ শতাংশ বা ১৪৯০ কোটি ডলার।
৪ লাখ কোটি ডলারের লক্ষ্য: বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানি হিসেবে শীর্ষে উঠে আসার পর এনভিডিয়ার টেলিযোগাযোগ ব্যবসার বৈশ্বিক প্রধান ক্রিস পেনরোজ জানিয়েছেন, তারা তাদের উৎপাদন এবং প্রযুক্তিগুলো আরও উন্নত করতে কাজ করছেন। কোপেনহেগেনে একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, জেনারেটিভ এআই যাত্রা বিশ্বজুড়ে ব্যবসা এবং টেলিযোগাযোগকে বদলে দিচ্ছে। আমরা এর প্রারম্ভিক পর্যায়ে রয়েছি। বেসরকারি ব্যাংকিং সংস্থা ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজ এক নোটে বলেছে, আগামী বছর প্রযুক্তি শিল্পে ৪ লাখ কোটি ডলার বাজারমূল্যের প্রতিযোগিতাটি এনভিডিয়া, অ্যাপল এবং মাইক্রোসফটের মধ্যে কেন্দ্রীভূত থাকবে।